Biography of swmi vivikananda
Biography of swmi vivikananda
মহাত্মা গান্ধী (১৮৬৯–১৯৪৮) ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা, যিনি অহিংসার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তাঁকে সাধারণত "বাপু" (পিতা) বা "জাতির জনক" বলা হয়। তাঁর জীবন এবং দর্শন কেবল ভারতের ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। গান্ধীর পুরো নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তাঁর জীবন, সংগ্রাম এবং দর্শনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে উপস্থাপিত হলো।
প্রাথমিক জীবন
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ২ অক্টোবর ১৮৬৯ সালে গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান (প্রধানমন্ত্রী) এবং মাতা পুতলীবাই ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ও স্নেহশীলা নারী। মায়ের ধর্মপ্রাণতা গান্ধীর ব্যক্তিত্বে গভীর প্রভাব ফেলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ধর্মীয় ও নৈতিক আদর্শে লালিত হন।
গান্ধী ১৩ বছর বয়সে কস্তুরবা মাখানজি নামে এক মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি শিক্ষাজীবন চালিয়ে যান। ১৮৮৮ সালে, ১৯ বছর বয়সে, গান্ধী আইন পড়ার জন্য লন্ডনে যান। লন্ডনে তিনি ব্রিটিশ সংস্কৃতি ও জীবনধারা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন এবং সেখানেই থিওসোফি আন্দোলনের সঙ্গে পরিচিত হন, যা তাঁর আধ্যাত্মিক দর্শনকে আরও গভীর করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জীবন
১৮৯৩ সালে গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় যান একটি আইনি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসের সময় তিনি প্রথমবারের মতো বর্ণবৈষম্যের বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেন। একবার, ট্রেনের প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণের সময় তাঁর গায়ের রংয়ের কারণে তাঁকে জোরপূর্বক দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঠানো হয়। এই অপমানজনক অভিজ্ঞতা গান্ধীকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প দেয়।
তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ২১ বছর অবস্থান করেন এবং সেখানেই "সত্যাগ্রহ" (সত্যের প্রতি একনিষ্ঠতা) নামক অহিংস প্রতিবাদের দর্শন বিকাশ করেন। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করেন এবং সফল হন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীর ভূমিকা
১৯১৫ সালে গান্ধী ভারত ফিরে আসেন এবং ধীরে ধীরে জাতীয় কংগ্রেসে সক্রিয় হন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সত্যাগ্রহ এবং অহিংসার পথ বেছে নেন। তাঁর প্রধান আন্দোলনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. চম্পারন ও খেড়া আন্দোলন (১৯১৭–১৯১৮)
গান্ধীর প্রথম বড় রাজনৈতিক সাফল্য ছিল চম্পারন আন্দোলন, যেখানে তিনি বিহারের কৃষকদের পক্ষে ব্রিটিশদের অন্যায় করব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এর পরেই খেড়া অঞ্চলে খরার কারণে কৃষকদের কর মওকুফের দাবিতে সফল আন্দোলন করেন।
২. অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০–১৯২২)
গান্ধী ব্রিটিশ পণ্যের বর্জন এবং স্বদেশী শিল্পের প্রচারের মাধ্যমে ব্রিটিশদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার পরিকল্পনা নেন। এটি ভারতীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
৩. লবণ সত্যাগ্রহ বা দান্ডি মার্চ (১৯৩০)
ব্রিটিশদের লবণ করের প্রতিবাদে গান্ধী দান্ডি নামক স্থানে ২৪০ মাইল পদযাত্রা করেন। এই অহিংস আন্দোলন বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে এবং ব্রিটিশ শাসনের প্রতি গণপ্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।
৪. ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, গান্ধী "ভারত ছাড়ো" স্লোগান দিয়ে ব্রিটিশদের দেশ থেকে বিদায় নেওয়ার দাবি জানান। এই আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত অধ্যায় হয়ে ওঠে।
গান্ধীর দর্শন
গান্ধীর দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল অহিংসা এবং সত্য। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃত শক্তি অস্ত্রে নয়, বরং নৈতিকতায় নিহিত। তিনি স্বরাজ (স্বশাসন) এবং গ্রামীণ উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তাঁর আদর্শে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি, এবং অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
স্বাধীনতা ও গান্ধীর মৃত্যু
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। কিন্তু দেশভাগের সময় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় গান্ধী অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য অনশন পালন করেন। ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে, নাথুরাম গডসে নামক এক উগ্রবাদী হিন্দু গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করেন।
উপসংহার
মহাত্মা গান্ধী ছিলেন এমন এক ব্যতিক্রমী নেতা, যিনি অহিংসার মাধ্যমে একটি জাতিকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর জীবন এবং কর্ম বিশ্বজুড়ে মানুষকে ন্যায়বিচার, সহানুভূতি, এবং শান্তির জন্য লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করে। গান্ধীর আদর্শ এবং দর্শন আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং প্রেরণাদায়ক।